Wellcome to National Portal
মেনু নির্বাচন করুন
Main Comtent Skiped

শিরোনাম
ছয়ফুল্লাকান্দি শাহন শাহ্ হযরত রাহাত আলী শাহ্ এর মাজার শরীফ
স্থান
গ্রাম: ছয়ফুল্লাকান্দি, ডাকঘর: ছয়ফুল্লাকান্দি, ইউনিয়ন: ০৬নং ছয়ফুল্লাকান্দি, উপজেলা: বাঞ্ছারামপুর, জেলা: ব্রাহ্মণবাড়িয়া
কিভাবে যাওয়া যায়
শাহান শাহ্ হযরত রাহাত আলী শাহ্ এর মাজারে যাওয়ার যোগাযোগ ব্যবস্থা: ১। ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থেকে সিএনজি অথবা বাস যোগের মাধ্যমে সড়ক পথে কোম্পানিগঞ্জ, রামচন্দ্রপুর, রূপসদী বাজার হয়ে ছয়ফুল্লাকান্দি বাজার। যাতায়াত ভাড়া = ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থেকে সিএনজি যোগে কোম্পানিগঞ্জ = ৭০-৮০/- টাকা, কোম্পানিগঞ্জ থেকে রামচন্দ্রপুর = ৫০-৬০/- টাকা, রামচন্দ্রপুর থেকে রূপসদী বাজার = ২৫-৩০ টাকা, রূপসদী বাজার থেকে ছয়ফুল্লাকান্দি বাজার = ১৫-২০ টাকা। ২। স্থলযোগে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থেকে গোকন ঘাট, সেখান থেকে লঞ্চ বা স্পীড বোট যোগে নবীনগর = ৫০-৬০/- টাকা, নবীনগর সিএনজি ষ্টেশন থেকে সিএনজি যোগে রসূল্লাবাদ হয়ে রূপসদী বাজার হয়ে ছয়ফুল্লাকান্দি বাজার। ছয়ফুল্লাকান্দি বাজারেই অবস্থিত শাহান শাহ্ হযরত রাহাত আলী শাহ্ এর মাজার শরীফ। ৩। ঢাকা থেকে যে কোন যাতায়াত এর মাধ্যমে আরাই হাজার উপজেলা দিয়ে করইকান্দি/করইতলা ফেরী পাড়াপাড়ের মাধ্যমে বাঞ্ছারামপুর উপজেলা হয়ে ছয়ফুল্লাকান্দি বাজার।
বিস্তারিত

দর্শণীয় স্থান:

 

শাহ্ রাহাত আলী শাহ্ এর জীবনী:

 

বাংলাদেশ ওলী আউলিয়ার দেশ। গাউস কুতুবের দেশ। এদেশের প্রতিটি ধূলিকণার সাথে মিশে আছে কোন না কোন ওলীর পদপরশ। যুগে যুগে এদেশে আগমন ঘটেছে বহু সাধকের, আবার এদেশেও জন্ম গ্রহণ করেছে বহু ওলী-আওলীয়া। যাদের পূণ্য পদচারনায় গর্বিত এ বাংলাদেশ। আর এদেশেরই একজন মহান ওলী মুজাদ্দেদে জামান, গাউসুল আজম, মারফতে কেবলা, চার তরকীকার ফয়জান প্রাপ্ত বেলায়েতের কর্ণধার, তরীকায়ে রাহাতিয়ার ইমাম, মাহবুবে খোদা, শাহান শাহ্ হযরত রাহাত আলী শাহ্ (রহ:)।

 

হযরত শাহান শাহ্ রাহাত আলী শাহ্ এর জন্ম:

হযরত রাহাত আলী শাহ্ (রহ:) বৃহত্তর কুমিল্লা জেলার (বর্তমান ব্রাহ্মণবাড়িয়া) বাঞ্ছারামপুর থানার মধ্যনগর গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। তার বাবা ছিলেন আইন উদ্দিন মোল্লা। মায়ের নাম আয়না বিবি এবং দাদার নাম ছিল মোহাম্মদ হানিফ বেপারী বলেই ডাকতো। রাহাত আলী শাহের আসল নাম ছিল (মাদ্রাসা রেকর্ড অনুযায়ী) আবদুল আলীম। রাহাত আলী ছিল ডাক নাম। দু’ভাইয়ের মধ্যে তিনি ছিলেন ছোট। বড় ভাইয়ের নাম রহমত আলী। রাহাত আলী শাহের সঠিক জন্ম তারিখ জানা যায়নি। তবে প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে ওফাতের সময় তার বয়স ছিল ৮০/৮২ মত। সে হিসেবে মৃত্যুর তারিখ অনুযুয়ী তার জন্ম সম্ভবত ১৮৬২/১৮৬৩ খ্রী:, বাংলা ১২৭২ সালে।

 

শীতের শেষে বসন্ত আসি আসি করছে। ঠিক এমনি সময়ে এক রাত্রি শেষে পূর্ব দিগন্ত ফর্সা হয়ে ক্রমশ: রক্তিম বর্ণ ধারণ করতে যাচ্ছে। যাকে বলে সুবেহ সাদেক। এমনি সময় মধ্যনগর গ্রামের আইন উদ্দিনের স্ত্রী প্রসব ব্যথায় খানিকটা কোকিয়ে উঠলেন। চারদিক থেকে সমস্বরে মসজদ থেকে ভেসে আসছে আজানের মধুর “আল্লাহু আকবর” ধ্বনি। ঠিক সে সময়ে ঘর আলো করে এক টুকরো নূরের আলোর মত জন্ম নিলেন রাহাত আলী শাহ্। সন্তানের রূপে মুগ্ধ হয়ে মা ভুলে গেলেন দশ মাসের কষ্ট ভোগ এবং প্রসব যন্ত্রনা।

 

আইনউদ্দিন মোল্লা যথানিয়মে দ্বিতীয় পুত্রের আকিকা করে নাম রাখলেন আবদুল আলীম ওরফে রাহাত আলী। মা রাহাত আলী নামেই বেশী ডাকতেন। অপরিসীসম স্নেহ, মায়া-মমতা নিয়ে পিতা-মাতা এবং পিতৃব্যদের আদরে সোহাগে বড় হতে থাকে শিশু রাহাত আলী। শৈশব থেকেই তার মধ্যে ব্যতিক্রম লক্ষ্য করা যায়। যে দেখে সেই মুগ্ধ হয়ে যায়। কোন কান্নাকাটি নেই। যে হাত বাড়য় তার কোলেই লাফিয়ে পড়ে। যে কেউ তাকে কোলে নিয়ে অনুভব করেন এক স্বর্গীয় শান্তি।

 

শৈশব পেরিয়ে হাটি হাটি পা পা করে এগিয়ে যায় বাল্যের দিকে। সংগী জুটে যায় আরও ক’জন বালক। তাদের সাথে খেলতে যায়, বেড়াতে যায় কিন্তু কি যেন একটা অনুভূতি তাকে উদাস করে রাখে।খেলতে যেয়ে হয়তো প্রকৃতির মধ্যে কিছু একটা খুজে বেড়ায়, উদাস উদাস দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে। তারপর হয়তো এক সাথীর ডাকে আবার ফিরে আসে। ছেলের এহেন মনোভাব পিতামাতার মনেও ভাবান্তর এনে দেয়। তারা সিদ্ধান্ত নেয় রাহাত আলীকে মাদ্রাসা শিক্ষায় শিক্ষিত করবেন বলে।

 

শাহান শাহ্ হযরত রাহাত আলী শাহ্ এর শিক্ষা জীবনী:

কথা বলতে শেখার পর থেকেই বাবা মায়ের কাছেই শুরু হয় তার আরবী শিক্ষা। খুব অল্প দিনের মধ্যেই সে কালেমা সহ বেশকিছু সুরা মুখস্ত করে ফেলে। আর তারপর নিজ থেকেই বাবা মায়ের সাথে দেখাদেখি নামাজ পড়তে শুরু করে। তারপর মক্তবে ভর্তি করানো হয় তাকে। কিছু দিনের মধ্যেই সে কায়দা-ষিফারা (আমপারা) শেষ করে কোরআনের সবক নেয়। পড়াশুনায় গভীর উৎসাহ দেকে মন্তবের শিক্ষকরা তার প্রতি সহজেই আকৃষ্ট হয়। আকৃষ্ট হয় তার মায়াবী মিষ্টি চেহারা এবং তার আচার ব্যবহার দেখে। শিক্ষকদের ভাবতে কষ্ট হয় না এ ছেলে ভবিষ্যতে একদিন আলেম ব্যক্তিতে পরিণত হবে। তিই তারাও তার প্রতি বিষেষ যত্ন নিতে থাকেন। মক্তবের শিক্ষার পাশাপাশি রাহাত নিজউদ্যোগে কোরআন হেফজ করার চেষ্ট চালাতে থাকে এবং এ ব্যাপারে বেশকিছু অংশ মুখস্থও করে নেয়।

 

শাহান শাহ্ হযরত রাহাত আলী শাহ্ এর আচার-আচরণ, আকৃতি ও কথাবার্তা:

শৈশব থেকেই তিনি ছিলেন খুব শান্তশিষ্ট। কথা বলতেন খুবই কম। টানা টানা বড় দুটো চোখে তার চাহনী ছিল উদাস উদাস, অথচ গভীর তাৎপর্যপূর্ণ। পাড়া পড়শী, মুরব্বী ও শিক্ষকদের প্রতি ছিল তার গভীর শ্রদ্ধাবোধ। বাল্যকাল থেকে মজনু হালত প্রাপ্তির পূর্ব পর্যন্ত কেউ তাকে এক ওয়াক্ত নামাজও কাজ্বা করতে দেখেনি। যৌবনে তিনি ছিলেন বেশ সুস্বাস্থ্যের অধিকারী। দেহ ছিল মার্জিত-বলিষ্ঠ ও দোহারা গড়নের। উচ্চতা ছিল প্রায় ছ’ফুটের মতো। গায়ের রং ছিল কাচা হলুদের মতো উজ্জ্বল। উন্নত নাক। বুকে, পিঠে ও হাতে বড় পশম। গাল ভর্তি দাড়ি। বার্ধক্যে তার আধা পাকা চুল আর দাড়ি ছিল ধ্বধবে সাদা।

 

শাহান শাহ্ হযরত রাহাত আলী শাহ্ এর পোশাক:

মজনু হালাতে তার পোষাক আশাকের তেমন কোন বালাই ছিল না। একটা লুঙ্গি কেউ পড়িয়ে দিলে তাই পরনে থাকতো। উর্ধাঙ্গ থাকতো কালি। মাঝে মধ্যে হয়তো একটা ফতুয়া বা পাঞ্জাবী কেহ শরীরে পরিয়ে দিলে তা শরীরে থাকতো কিছুক্ষণ। মাঘ মাসের প্রচন্ড শীতেও তিনি খালি গায়ে থাকতেন। কেউ রাতে গায়ে কাথা দিয়ে দিলে পরদিন তিনি তা পানিতে ভিজিয়ে রাখতেন দিনভর। পরদিন রাতে সে ভেজা কাথা গায়ে দিতেন। মাঝে মাঝে পায়ে পড়তেন চটি জুতা। মাঝে মধ্যে খড়ম।

 

শাহান শাহ্ হযরত রাহাত আলী শাহ্ এর খাওয়া দাওয়া:

খাওয়া দাওয়ার প্রতি রাহাত আলী শাহ্ ছিলেন নিস্পৃহ। চেয়ে কোন কিছুই তিনি খাননি কোনদিন। খাওয়া দাওয়ার ব্যাপারে তার কোন ধরা-বাধা টাইমও ছিল না। যদিও বা মাঝে মধ্যে ভক্তবৃন্দের পীড়াপীরিত আহারে বাধ্য হতেন, তাও ছিল খুবই পরিমিত বা নাম মাত্রও বলা যেতে পারে।